Thursday, 24 December 2015

আমার শহর দুর্গা পুর

১৯৬৮ সালে ৪থা এপ্রিল দুর্গা পুর মহকুমাতে পরিণত ।
গোপী নাথ চট পাধ্যায় গভীর জংগলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গোপী নাথ পুর । সেদিনের গোপ শাল পিয়াল তাল তামালের  গভীর অরন্যে ঘেরা জঙ্গল । আমরা ভুলে গেছি ইছাই ঘোষ কে। আমরা ভুলে গেছি কর্ণ সেন কে ,কত রাজা রাজত্ব করে গেছে এই রাড় ভুমি ,গোঁপ ভুমিতে । অবিভক্ত বাংলার বিক্রমপুর থেকে দাই হাঁট তার পর বাঁকুড়ার জগ্ননাথপুর গ্রামে বসতি স্থাপন করেন বসন্ত কুমার চট পাধ্যায় । কিন্তু সেখানকার মণ্ডল পরিবারের সাথে বনিবনা না হবার জন্য নিরুপায় হয়ে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন সেই গ্রাম ত্যাগ করে দামোদর নদের তীরে তার পুত্র গোপী নাথ ন দিহা তে বসতি স্থাপন করেন । গোপী নাথ বর্ধমান মহারাজ তিলক চাঁদ মহতাব এর কাছ থেকে তার জমিদারির কিছু অংশ নিজ নামে পত্তনী ষত্ব উচিত মুল্য দিয়ে ক্রয় করেন । যার উত্তরে অজয় নদ হতে দক্ষিণে দামোদর নদ পূর্বে আউসগ্রাম পশ্চিমে ইছাপুর যার নাম ছিল জংগল মহল । ১৭৯৬ সালে গোপী নাথ বাবুর নাম অনুসারে এই অঞ্চল গোপী নাথ মৌজা নামে পরিচিত । আজকের দুর্গা পুরের ন্তুন প্রজন্ম ভাবতে পারবেন না অতীতের দুর্গা পুর কি ছিল । গোপী নাথ বাবু এখানে বসতি স্থাপন করে তার নাম অনুসারে নাম করন করেন গোপী নাথ পুর । তিনি ভৈরব পুর ,আনন্দ পুর ,সগর ভাঙ্গা ,করঙ্গ পাড়া কালিপুর ,ও দুর্গা পুর বাজার মোট ৯ টি গ্রামের পত্তনি নেন ।
অজয় আর দামোদর নদের মাঝে যে রাজ্য ছিল তা গোপ ভুম হিসাবে পরিচিত ।
জন শ্রুতি অনুযায়ী আড়া ,বামুন নারা গোপাল পুর ,রূপগঞ্জ ,কালীগঞ্জ এবং গড়ের জঙ্গলে অংশ বিশেষ নিয়ে একসময় রারপুরি নামে এক সম বৃদ্ধি শালী সুন্দর নগরী ছিল । রাড় পুরীর ইতিহাসে র সঙ্গে আড়া গ্রামের ন্যায় এই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বামুন নারা গ্রামের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনি সট । আড়া গ্রামের যে অংশে বামুন দের বসতি { বামুন + আরা = বামুন নারা }
গোপী নাথ পুরের অঙ্গ হিসাবে তৈরি হল দুরগাপুর ,কালিপুর ,বিহার পুর , নারায়ন পুর ,আনন্দ পুর ,শ্যাম পুর , ভৈরব পুর , । ১৮৫৫ সালে রানিগঞ্জ পর্যন্ত রেল পথ প্রসারিত করতে একটি ছোট হল্ট স্টেশন তৈরি করা হল । গোপী নাথ বাবুর ছোট ছেলে দুর্গা চরণের নাম অনুসারে এই জনপথের নাম
দুর্গা পুর । স্বাভাবিক ভাবে এই হল্ট স্টেশনের নাম দুরগাপুর ।

দুর্গা পুর দুর্গা পুর দুর্গা পুর দুর্গা পুর  আমার শহর ।

আমার জেলা বর্ধমান

গঙ্গার দক্ষিণ ও পশ্চিম ভাগের অঞ্চলকে প্রাচীন কালে রাড় ভুমি বলা হত । প্রাচীন রাড়ের প্রায় মাঝ খানে অবস্থিত ছিল আজকের বর্তমান বর্ধমান । বর্ধমানের নামকরণ নিয়ে দু রকম অভিমত আছে ।একটি মত হল ২৪ তম জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমান সভামির নাম থেকে এর উৎপত্তি । জৈন কল্প সুত্রে উল্লেখ আছে মহাবীর কিছুদিন অস্তিকা গ্রামে কাটিয়েছিলেন । সেটি বর্ধমান নামে পরিচিত ছিল ।
অন্য মতে বর্ধমান অর্থাৎ বৃদ্ধি । উত্তর গাঙ্গেয় অঞ্চল থেকে আরজ প্রভাব ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে  সঙ্গে এই অঞ্চলের প্রাচুর্য বাড়তে থাকায় এর নাম বর্ধমান ।
বর্ধমানের মল্ল সারুল থেকে পাওয়া খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতকের একটি তাম্র লিপি থেকে বর্ধমান ভুক্তি প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় । সেই সময় বঙ্গাধি পতি ছিলেন গোপ চন্দ্র । গোপ চন্দ্রের অধিনে মহাসামান্ত বিজয় সেন সেই সময় বর্ধমান ভুক্তির শাসন কর্তা ছিলেন । বৃহৎ সং হিতা , মা্কণ্ডেয় পুরানে বর্ধমান জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায় ।
পাল যুগের শেষ দিকে তৃতীয় বিগ্রহ পালের রাজত্ব কালে বর্ধমান জেলার গোপ ভুম পরগনায় ইছাই ঘোষ নামে এক সামন্ত রাজা , বঙ্গাধি পতি গৌড় রাজ কে অগ্রাহ্য করে এক শক্তিশালি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । কাঁক সা অঞ্চলে শ্যামারুপা গড় জঙ্গলে ঢেঁকুর তার রাজধানী ছিল । ১৭১১ সালে রচিত ঘনশ্যাম চক্রবর্তী র " ধর্ম মঙ্গল " গ্রন্থে ইছাই ঘোষের কাহিনী পাওয়া যায় ।
আকবরের রাজত্বে মুঘল সাম্রাজ্য কে ১৩ টি সুবা তে ভাগ করা হয় । এর অন্যতম সুবা বাংলা ১৯ টি সরকারে বিভক্ত ছিল । " আইন ই আকবরি " তে সরকার স্রিফাবাদের একটি মহাল বা পরগণা হিসাবে বর্ধমানের উল্লেখ আছে । জাহাঙ্গীরের রাজত্বে জায়গীরদার শের আফগান বিদ্রোহ ঘোষণা করলে বাংলার শাসক  কুতুবুদ্দিন তাকে দমন করতে আসেন । যুদ্ধে দুজনে মারা যায় । বর্ধমান শহরে পাশাপাশি এই দুজনের সমাধি আছে ।
১৬২৪ সালে বিদ্রোহী শাহাজাদা খুররম { সম্রাট শাহাজান }বর্ধমান দুর্গ ও শহর দখল করেন । এই সময় তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন । মসজিদের শিলা লিপি তে শাহজানের নামের উল্লেখ পাওয়া যায় । সপ্তদশ শতাব্দী তে শেষ ভাগে সঙ্গম রায়ের উত্তরাধিকারী কৃষ্ণ রাম রায় বাদশাহ
আওরঙ্গজেব এর কাছ থেকে ফরমান পান । এই ফরমান অনুযায়ী তিনি বর্ধমানের জমিদারি ও চৌধুরী পদ পান ।  পরবর্তী কালে তিনি সুবা বাংলার অন্যতম জমিদার হ্যে ওঠেন ।
রায় পরিবারের উত্তর সুরি চিত্র সেন রায় মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে রাজা উপাধি পান।  চিত্রসেনের ভ্রাতৃ পুত্র এর পর রাজা উপাধি পান । তার আমলে বর্ধমানে বিভিন্ন স্থানে পুকুর আর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৭৫৫ সালে তিলক চাঁদ তার জমিদারিতে ইংরেজ দের ব্যবসা করার অনুমতি নাকচ করে দিলে নবাব আলিবর্দি র হস্তক্ষেপে এই বিবাদের মীমাংসা হয় । কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর নবাব মীরজাফর বর্ধমান জেলার রাজস্ব ইংরেজদের কাছে বন্ধক রাখে ।১৭৬০ সালে বর্ধমান মেদনিপুর চট্টগ্রাম সহ ইস্ট ইন্দিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেয় । সেই সময় বর্ধমান বাঁকুড়া হুগলী ও বীরভূম  জেলার ১/৩ নিয়ে যে অঞ্চল গড়ে ওঠে তাকে চাকলা বর্ধমান বলা হত । ১৮৮৫ সালে বর্ধমান জেলার বর্তমান আকার পায় ।
১৯৫৩ সালে পশ্চিম বঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ আইন অনুসারে বর্ধমান রাজের বেশিভাগ সরকারের হাতে চলে যায়  । রাজ পরিবারের রাজ প্রসাদ মহতাব ম ঞ্জিল এখানেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ।